১. মুক্তিযোদ্ধা জনাব ইদ্রিস আলী:
২. বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব ফারুকুল ইসলাম:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে
সফলতার গল্প ০২: মো: ফারুকুল ইসলাম ‘সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা, তিনি মানুষকে এতো সুন্দর রুপে সৃষ্টি করেছেন । সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি, মানুষের পরিবেশ বিকাশে যা যা প্রয়োজন, তা সব কিছুই সুবিনাস্ত করেছেন। বিনিময়ে তিনি শুধু তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রাপ্ত বয়সে কর্মজীবনে চেষ্টা করলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। আমি একথা অকপটে স্বীকার করি যে, মানুষের জীবনে কষ্ট না আসলে তার সুখের বিস্তৃতি ঘটে না এবং সুখ অনুভব করা যায় না। যে মানুষ এই কথা বলতে পারে তার সম্পর্কে সহজেই বলতে পারি তিনি একজন ধর্মভীরু, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, বিবেকবান, দায়িত্বশীল, কর্মঠ, সৎ ও আদর্শ মানুষ৷ মোঃ ফারুকুল ইসলাম ১৯৬২ সালের পহেলা নভেম্বর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন৷ বাবা আব্দুর রশিদ মিয়া পেশায় ডিপার্টমেন্টাল ব্যবসায়ী ও মা আসিয়া বেগম গৃহিনী৷ মো: ফারুকুল ইসলামের ডাক নাম “ফারুক”। ৬ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ফারুক ছিল চতুর্থ । শান্ত শিষ্ট ছেলেটি কে ১৯৬৮ সালে আমতৈল প্রাইমারি স্কুল এ ভর্তি করা হয়। অংকে অত্তাধিক মেধাবি ছিলো, এই জন্যই মনে হয় গুণী জনেরা বলে পৃথিবীতে অংকের কদর সবচেয়ে বেশী, যদি তুমি অংক বোঝ; তাহলে তুমি সব পারবে। এরপর আমতৈল বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে কীর্তিতর সাথে এস.এস.সি পাশ করে। কিন্তু অভাবী সংসারের কারনে দ্রুত চাকরী করা যাবে, এমন কোন জায়গায় শিক্ষা নেবার ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়। পরবর্তী বন্ধু দের কাছে শুনতে পারে পলিটেকনিকে ভর্তি হলে তাড়াতাড়ি চাকুরী পাওয়া যাবে। সেই সময় উচ্চ শিক্ষার আন্দোলনের কারণে ভর্তি হলেও ক্লাস বন্ধ থাকায় শ্রীপুর কলেজ থেকে ইতিমধ্যে এইস.এস.সি পাস করেন। ১৯৮০ সালে পলিটেকনিকে ক্লাস শুরু হল। কিন্তু পড়াশুনায় প্রথম দিকে একটু আলসটা ছিল তাই তো সিরাজ উদ্দিন আহমেদ স্যার এর মেটালজি ভাইভা পরীক্ষার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ছিলেন পরবর্তী বন্ধুদের মাধ্যমে অবগত হয়ে; স্যারের বকুনি খাওয়ার পর পুনরায় ভাইভা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। রক্তে ছিল নেতা হবার বাসনা কারন দাদা আসগর হোসেন মৌলভী ছিল স্বদেশী আন্দলেনের অনেক বড় নেতা। কোন নির্বাচন না করলেও জাসদ ছাত্র লীগ এর একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। পলিটেকনিকে সকল শিক্ষক ছিল পরম শ্রদ্ধার পাত্র কিন্তু সিরাজ উদ্দিন আহমেদ স্যার ছিল তার কাছে আদর্শের বাতিঘর আর মুস্কিলে আসান । ১৯৮৩ সালে পলিটেকনিক থেকে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকয় আসেন জীবন জীবিকার তাগিদে। শামস্ গার্মেন্টস লিমিটেডে মাত্র ২৫০ টাকা মাসিক বেতনে “রক্ষণাবেক্ষণ সাহায্যকারী (মেইনটেনেন্স হেল্পার)” হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জনাব ফারুক বুঝতে পারেন গার্মেন্টস শিল্পে প্রডাকশন ও মার্চেন্ডাইজারের ভবিষ্যৎ ভাল; তাই যতো দ্রুত সম্ভব ট্রাক পরিবর্তন করতে হবে। এক বছর পর বন্ধু আসাদের (বর্তমানে আসাদ রেডিসন গ্রুপের সত্ত্ব্ধিকারী)সহযোগী হিসাবে ৪৫০০ টাকা বেতনে রাসেল গ্রুপ এ এ্যাসিসট্যান্স প্রডাকশন ম্যানেজার পোষ্টে যোগদান করেন। দারুন কর্ম- দক্ষতা প্রদর্শন এবং পরিশ্রম করতে থাকে। আরও ভাল করার জন্য দুই বছরের মধ্যে কোম্পানি পরিবর্তন করে আনিছুর রাহমান সিনহার ওপেক্স গ্রুপে প্রডাকশন ম্যানেজার হিসাবে ১৯৮৫ সালে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালের ৯ ই অগাস্ট পারিবারিক সিদ্ধান্তে আসমা বেগম (কনক) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাংলায় মাস্টার্স করা জীবন সঙ্গিনী সব সময় স্বামীর পাশে থেকেছেন ছায়ার মত। একজন ফারুকুল হতে হলে তার গল্পে একজন আসমা বেগমের ও প্রয়োজন। জনাব ফারুক ও কনক বেগমের কোলে ১৯৯৩ সালের ৪ই নভেম্বর ছেলে নাবিল বিন ফারুক (ঈশান) এর জন্ম হয়। বর্তমানে ঈশান অস্ট্রেলিয়ার, পার্থ এ অবস্থিত এডিট কাউন্ট ইউনিভার্সিটি তে একাউন্টস ম্যানেজমেন্ট এ গ্রাজুয়েশন করছে। প্রতিটা ভাগ্যবান মানুষের একজন আদর্শিক থাকে যার পরম ভালবাসা ও স্নেহ উন্নতির চরম শিখরে তুলতে পারে। “যে রাতকে, দিন; আর দিন, কে রাত বললেও” , সেটা অবলীলায় স্বীকার করত জনাব ফারুক। বিক্রমপুরের সম্ভ্রান্ত “সিনহা পরিবারের” আনিসুর রহমান সিনহা "ওপেক্স গ্রুপ" এর মালিক; তাকেই গুরু বলে মানতেন এখনো তাকেই অনুসরণ করেন৷ ফারুকুল ইসলাম এর অন্ধ বিশ্বাস, পরিশ্রম, সততা ও কাজের প্রতি ভালবাসা তাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি জনাব ফারুকের আরো দুই ভাই জনাব হারুক আহমেদ ও জাহিদ আহমেদকে তার ওপেক্স গ্রুপ এ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তাদের দক্ষতা ও কমিটমেন্ট এ সন্তুষ্ট হয়ে জি. এম. মর্যাদায় উত্তীর্ণ করেছেন। জনাব আনিসুর রহমান এর আশির্বাদের হাত মাথায় ছিল বলেই আজ অনুরিমা গ্রুপের কর্ণধর হতে পেরেছেন জনাব ফারুকুল ইসলাম। ১৯৯৫ সালের দিকে বন্ধুদের সাথে করে গার্মেন্টস ব্যবসা করবে বলে মনস্থির করেন। সংগ্রহে থাকা লক্ষাধিক টাকা দিয়ে শুরু করে ব্যবসা। কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসায় ভরাডুবি ঘটে। এই জন্যেই হয়ত তার বাবা বলত, "বৌও এর থেকে যাকে বেশি বিশ্বাস করতে পারবে, তার সাথেই পার্টনার এ ব্যবসা করবে।" বাস্তব অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে পারলে তার বিজয় অবসম্ভাবী। ছোট বেলায় আমার নানা বলত সিধান্ত নিবে তিন মাথা যার তার কাছ থেকে। এখন বুঝি তিন মাথা কি? তিন মাথা হলো একজন মুরব্বি যে হাটু গেড়ে বসে এবং দুই হাটুর মাঝে মাথা থাকে ; দুই পায়ের হাটু আর মাথা একসাথে করে রাখে বলেই তিন মাথা বলে। সে একজন সময়ের কাছে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞতা সম্পন্ম লোক। সেই ভাগ্যবান যার মাথায় জ্ঞানীদের হাত আছে , সেই ভাগ্যবান যার পরামর্শদাতা আছে, সেই ভাগ্যবান যার সততা আছে। মনোবল হারায়ে ফেলে কিন্তু জনাব ফারুকের ভালবাসার লোক ছিল, ছেলের মতই তাকে অতান্ত স্নেহ করত; এককথায় তাকে আগলে রাখত জনাব আনিছুর রহমান সিনহা। ১৯৯৮ সালের ২৮ শে এপ্রিল আসমা বেগমের কোলে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অত্যান্ত আদরের মেয়েটির নাম রাখা হয় সুমাইয়া আফরিন (উর্বি)।উর্বি এখন ভিকরুনন্নেসা কলেজে এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ১৯৯৯ সালে আবার পূর্ণ উদ্দ্যমে জনাব বাবু খানের (রাইজিং গ্রুপ) সাথে পার্টনার এ ব্যবসা শুরু করেন পাশাপাশি ওপেক্স গ্রুপে চাকরি করতে থাকেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান “ডি এম সি আপেরালস লিমিটেড”, যিনি নিজেই চাকরী খুঁজে বেড়াতেন তার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান এ বর্তমান ১৫০০ জনের ও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০০ সালে চাকুরীর পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। শুরু হয় ব্যবসায়ী ফারুকুল ইসলাম হয়ে ওঠার গল্প। ২০০১ সালে তিন জন মিলে আশুলিয়ায় “অরুনিমা স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড” নাম একটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস। যাতে বর্তমান ৬০০০এর ও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “এ কিউ এন বিজনেস এসোসিয়েট লিমিটেড”; যাতে বর্তমান ৬০-৬৫ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। ২০০৭ সালে ভাই দের সাথে করে মিরপুরে “ট্রিপল সেভেন আপেরালস লিমিটেড” নাম একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস তৈরী করেন। যাতে বর্তমানে ২০০০ এরও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালে সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য নিজ গ্রামে ৬০০০ মানুষের কর্মসংস্থান দাড় খুলতে ইন্ডিয়ান এক ভদ্র লোকের সাথে করে “সান আপেরালস লিমিটেড” নাম একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস তৈরী করেছেন। প্রায় ২০,০০০ মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা, কঠোর পরিশ্রমী, চ্যালেঞ্জিং ও অমায়িক ব্যক্তিত্ব জনাব ফারুকুল ইসলাম মনে করেন তার উন্নয়নের জন্য যে বিষয় গুলো খুব গুরুত্ব পূর্ণ তা হলো, ১. কমিটমেন্ট ২. পরিশ্রম ও ৩. সততা । তিনি ইউরোপের দশ-বারটি দেশ সহ ভারত , চীন, ব্যাংকক, হংকং, থাইল্যান্ড , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া, জাপান ভ্রমন করেছেন। ২০১৩ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন। ব্যক্তি জীবনে কর্মব্যস্ত এই মানুষটি অবসর ঘুমায়ে কাটান। তিনি মনে করেন একজন নতুন উদ্যোক্তা কে নিম্নের কাজ গুলো করলে অবশ্যই উন্নতি করবে। ১. নতুন ধরনের কোনো ব্যবসা শুরু করা , যেটা এখনো শুরুই হয় নি। যেমন হতে পারে কৃষি পণ্য প্যাকেজিং করে রপ্তানি করা, জ্বালানী উৎপন্ন করা যাবে এমন কোনো প্রকল্প করা ইত্যাদি। ২. চ্যালেঞ্জিং মনোভাব তৈরী করা। ৩. পরিশ্রম ৪. গ্রাম ভিত্তিক ব্যবসা ৫. দায়িত্ববোধ ৬. সততা ও ৭. কমিটমেন্ট রক্ষা করা। তিনি ব্যক্তি জীবনে একজন পরহেজগার মানুষ ও দানশীল হিসাবে যথেষ্ঠ পরিচিত। গ্রামের একটা হেফজ খানায় ২০-২৫ জন এতিমকে ভরণ পোষণ করছেন। ভিক্ষা বৃত্তিকে কে তিনি অপছন্দ করেন। প্রতিটা মানুষের বিশেষ গুন থাকে তেমনি জনাব ফারুকের আছে যেকোনো মানুষকে সহজেই আপন করার মত এক অসম্ভাবী গুনাবলী। মিষ্টভাষী ও মিশুক মানুষটির সরণশক্তি খুব প্রখর ১০০০ এর ও বেশি মোবাইল নম্বর মুখস্থ বলে দিতে পারে নির্ভুল ভাবে। প্রাণবন্ত জনাব ফারুক মন খুলে সকলের সাথে কথা বলেন তবে ব্যবসায়ী দিক থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন। যশোর পলিটেকনিকের প্রতি তার আছে বিশেষ দুর্বলতা। পলিটেকনিকের বন্ধুদের কে এখনো তিনি মনে প্রাণে ভালবাসেন। তাই তো শত বাস্ততার মাঝেও যশোর পলিটেকনিকের যেকোনো প্রোগ্রাম এ তিনি ছুটে আসেন। তিনি যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনীর কার্য নির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা।
৩.বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব আসাদুজ্জামান
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে
সফলতার গল্প ০৩ : জনাব কে এ এম মো: আসাদুজ্জামান
যশোর পলিটেকনিকের প্রতিষ্ঠিত যে কয়জন সূর্যসন্তান আমাদেরকে অনুপ্রণীত করে তাদের মধ্যে অন্যতম হল আসাদ যার অভিধানিক অর্থ হল সিংহ৷ নিরংকার, মনখোলা স্বভাবের এই মানুষটির আছে যশোর পলিটেকনিকের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা
৷ শিক্ষা কখনো কাউকে প্রতিষ্ঠিত বা সমাজের বিত্তবান শ্রেণীর লোক বানাতে পারে না কিন্তু তা অর্জনের যোগ্য করে তুলতে পারে, যদি কেও সেটা চাই৷ যে কোন মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তুমি কি হতে চাও? সে বলবে; আমি এই হতে চাই, ওই হতে চাই ইত্যাদি৷ আমি এখন কি আছি? সদ্য ডিপ্লোমা পাশ করা এক সম্ভাবনাময় তরুণ৷ কিন্তু কি চাই? কোটি টাকার মালিক হতে! বলাটা বা চিন্তা করাটা কয়েক সেকেন্ডে সম্ভব কিন্তু বাস্তবতা নিষ্ঠুর, বর্বর৷ কযেক সেকেন্ডের মধ্যে চাওয়া স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে হয়ত কয়েক বছর বা কয়েক যুগ অথবা সারাজীবন লাগতে পারে হয়তবা নাও হতে পারে এর বাস্তবায়ন৷ কিন্তু কেউ এটা অর্জন করে, কিন্তু কিভাবে? কারন তারা তাদের লক্ষে পৌছানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিঞ্জ, আত্মবিশ্বাসী, চ্যালেঞ্জিং, পরিশ্রমী, অনুগত, সৎ , তদুপরী ভগ্যপুষ্ঠ ৷ তেমনি একজন জনাব আসাদ৷ ১৯৬২ সালের পহেলা জুন মাগুরার হাট শ্রীপুরস্থত তারা উজাইল গ্রামের মধ্যবিত্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন৷ বাবার নাম মো সাখাওয়াত হোসাইন খান, থানা শিক্ষা অফিসার হিসাবে সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন ও মাতা মতিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী৷ ১৯৬৯ সালে মোহাম্মদপুর প্রাইমারী স্কুলে পাঠের সূচনা ঘটে৷ চতুর্থ শ্রেণীতে থাকা কালীন বাবার চাকুরীর কারনে ঝিনাইদহের উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রণীতে ভর্তি হন৷ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন হরিনাকুন্ড থানার পার্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন আমতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ে, এখান থেকেই ১৯৭৭ এস এস সি পাশ করেন৷ ছয় ভাই দুই বোন, সবার বড় আসাদ৷ তিনি অবগত হলেন বন্ধু রাজ্জাকের মাধ্যমে , ডিপ্লোমা করলে দ্রুত চাকুরী পাওয়া যায়৷ এর আগে যারা পড়েছে তাদের কেউ বেকার নেই ৷ তাছাড় এই শিক্ষা গ্রহন করে চাকুরী করলে প্রতিষ্ঠান হতে মটর সাইকেল পাওয়া যায়৷ বেশ ভাল, পড়লে দ্রুত চাকুরী সাথে মটর সাইকেল৷ ১৯৭৭ সালে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ম্যাকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন৷ কিন্তু তাড়াতাড়ী আর হল না, হোস্টেলের পানির কারনে স্কিন প্রবলেম হলে এক বছর বন্ধ থাকে অাবার উচ্চ শিক্ষার আন্দোলনের কারনে শিক্ষা বছর আরো দুই বছর পিছায়ে যায়৷ পলিটেকনিকে থাকা কালীন জাসদ ছাত্র লীগ করতেন৷ ১৯৮৩ সালের পলিটেকনিক পাঠ শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন৷ বন্ধু রবি, পত্রিকার মাধ্যমে বিঞ্জপ্তি দেখে দুই বছরের ষ্টাম্প করে তৎকালিন কাওরান বাজারস্থ 'প্যারিস গর্মেন্টসে' মেইনটেন্যান্স ইন্জ্ঞিনিয়ার হিসাবে মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ তিন মাস পর ৮০০ টাকায় উর্ত্তীর্ণ হয়৷ যপই এর ড্রইং শিক্ষক মধুসুদন দে শিক্ষকতা ছেড়ে 'ষ্টাইল ক্রাফট লিমিটেড' এর ডাইরেক্টর হিসাবে চাকুরী করছেন৷ এই খবর শুনে তার সাথে দেখা করতে আসেন৷ ১৯৮৪ সালে তার গার্মেন্টসে ১৭০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ এক বছর পর মিন্টু নামের এক বড় ভাইয়ের অনুরোধে নারায়নগঞ্জের 'রাসেল গার্মেন্টসে' ৩৮০০ টাকা বেতনে প্রডাকশন ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন৷ অল্পদিনেই কর্মঠ আসাদ, মালিক আক্কাস উদ্দিন মোল্লার খুব বিশ্বস্থ হয়ে ওঠেন৷ কিন্তু ১৯৮৬ সালে চাকুরী ছেড়ে আনিছুর রহমান সিনহার 'ওপেক্স গ্রুপে' ৪৫০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ উদ্যম ও কঠোর পরিশ্রমে জনাব সিনহার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন৷
১৯৮৯ সালে ৮ই অক্টবর মাগুরার মোহাম্মদ পুরের ইয়াসমিন জামানকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহন করেন৷ আজকের এই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে মিসেস জামানের অবদান অকপটে স্বীকার করেন জনাব আসাদ৷ ১৯৯১ সালে সুখী দম্পত্তির কোল আলো করে আসেন ইসরাত জামান স্নিগ্ধা৷ স্নিগ্ধা বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই গ্রাজুয়েশন করছেন এবং জামাই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করছেন৷
১৯৯৬ সালে জান্নাতুল ফেরদৌস চাঁদনী পৃথিবীর বুকে জন্ম গ্রহন করেন৷ বর্তমানে চাঁদনী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এ-টু তে পড়াশোনা করছে৷ এরই মধ্যে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন৷ ২০০২ সালে তৃত্বীয় সন্তান রুপন্তি জামান ভূমিষ্টিত হয়৷ বর্তমানে দিল্লি পাবলিক স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড ফোরের ছাত্রী৷ ২০০৬ সালে রেডিশন ওয়াসিং প্লান্ট লিমিটেড নামে একটা ওয়াশিং প্লান্টের মাধ্যমে ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করেন; যাতে বর্তমান ৫০০ মানুষের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে ৷ কিন্তু তার অনুগত, পরিশ্রম ও সততার কারনে চাকুরী করা সত্বেও আলাদা করে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করার পরও পিতৃতূল্য জনাব আনিছুর রহমান সিনহা তাকে উৎসাহিত করেছে৷ জনাব সিনহার অনুকরনীয় আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটলে সত্যিকার অর্থেই এই দেশ আরো সমৃদ্ধি অর্জন করবে৷ জনাব সিনহা কর্মঠ অসাদকে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর(অপারেশন) এ পদন্নতি করেন৷ ২০০৯ সালে রেডিশন অ্যাপারালস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বেসিক টঙ্গীতে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ বর্তমানে ১৬০০ জনের অধিক কর্মসংস্থান হচ্ছে৷ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন রেডিশন গার্মেন্টস৷ যাতে প্রায় ১৬০০ জন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের জীবন জীবিকা পরি চালনা করছেন৷ ২০১২ সালে দীর্ঘ ২৬ বছর চাকুরী করবার পর সিনহা সাহেবের অনুমতি নিয়ে চাকুরীর স্তফাহ দেন ৷তিনি চায়না, ব্যাংকক, হংকং, জাপান, সিংগাপুর, মলয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মান ও ইতালি ভ্রমন করেন৷ তাছাড় ২০১০ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব যান৷ তিনি মনে করেন কঠোর পরিশ্রম, কমিটমেন্ট ও সততা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং নিজের গোল সেট করতে পারলে অবস্মভবী হবে তার সফলতা৷ তিনি একজন সমাজ সেবক ও দানশীল মানুষ৷ খোলাখুলি কথা বলতে খুব পছন্দ করেন ও দ্রুত মানুষের সাথে মিশতে পারার এক যাদুকরি গুন আছে৷ তিনি মাগুরায় একটি এতিমখানা পরিচালনা করেন৷
৪. বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব জহুরুল হক মুন্সী:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে সফলতার গল্প ০৪ : জনাব জহুরুল হক মুন্সী প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী সৌরভ মাহমুদ বলেছেন; অলস ব্যক্তিরা চাকরী করেন, পরিশ্রমীরা ব্যাবসা খোঁজেন। ছোট বেলায় আগুন জ্বালানো ম্যাচ বিক্রি করে মাত্র পাঁচ পয়সা লাভ করেন, ছোট্ট জহির। সিদুরে মেঘ দেখে বোঝা যায়, কেমন বৃষ্টি হবে! ওই পাঁচ পয়সার লাভ তাকে হয়তো এখন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে ১০০ এর বেশি পরিবারের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তার মাধ্যমে করেছেন। ১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারী চুয়াডাঙ্গার হাসপাতাল রোডের পাশের মহল্লায় মধ্যবিত্ত মুন্সী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যবসায়ি বাবা লুতফর হক মুন্সী ও হামিদা বানুর তিন ছেলে চার মেয়ের মধ্যে মেজো ছেলে জহুরুল হক মুন্সী। ছোট বেলা থেকে নরম-শান্ত স্বভাবের। ছেলেটি তার বাবার পরিবহন ব্যবসা বা মুদি ব্যবসা দেখাশুনা করতো; সাথে চলতো পড়াশুনা। দামুরহুদা উপজেলার একটি প্রইমারি স্কুল এ ১৯৬৬ সালে হাতেখড়ি শুরু হয়। তারপর চুয়াডাঙ্গা ভি.জে. স্কুল হতে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজ হতে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তারপর বাবার উৎসাহে ১৯৮০-৮১ সালে ভর্তি হয় যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। আলী ইদ্রিস স্যার এর তত্ত্বাবধানে “শ্বাব্দিক সাহিত্য সংসদে” সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। কবিতার ভীতর ছিল তার আগাধ ভালবাসা। একদিন স্বরচিত “মুক্ত কবিতা পাঠের আসরে” স্থানীয় একজন কে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করতে না দেয়ার অপরাধে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, অবশ্য পরের দিন স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো; “এক হাতে রামদা অপর হাতে কবিতা” খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা, ঘটনাটা হয়তো আর কোথাও হয়নি যে, কবিতা পাঠ করতে না দেয়ায় ধারাল অস্ত্রর আক্রমণ। ছাত্র ইউনিয়ন এর এই কর্মী, যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পাস করার পর বাবার ব্যাবসায় সহযোগিতা করতে থাকে এরই মধ্যে ৮-ই অগাস্ট-১৯৮৭সালে ফিরোজা হক এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্যে ৮ই অক্টোবর-১৯৮৯সালে বিয়ের দুই বছরের মাথায় পৃথিবীর বুকে মেয়ে মনিরা জন্ম গ্রহণ করে। বাবার ব্যাবসায় মন্দাভাবের কারনে ব্যাবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন। একদিন বেকার জহির কে তার বাবা বলেন “মানুষ তো রিক্সা চালায়েও সংসার চালাচ্ছে তুই কিছু করতে পারিস না?” বাবারএই কথা মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে, চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় এসে ১৯৯০ সালে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ১২০০ টাকা বেতনে ওপেক্স গ্রুপ চাকরি শুরু করে। ওভার টাইম জব করে সব মিলিয়ে ১৮০০ টাকা বেতনেই ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। তিন বছর পর অত্তাধিক পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আবার শুরু হয় কর্ম জীবন। এইচ এম আলী আলতাফ এর আর্ক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এ জয়েন্ট করে। কঠোর পরিশ্রম, সততা, কাজের প্রতি ভালবাসা, একাগ্রতা ও কমিটমেন্ট তাকে আলী আলতাফ এর কাছে আরও বিশ্বস্ত করে তোলে। ২০০০ সালের দিকে আলতাফ পরলোক গমন করলে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আলী আলতাফ এর ভাই জনাব আলী আশরাফ কোম্পানিটি চালু করতে বিশ্বস্ত জহুরুল হক মুন্সী কে দায়িত্ত দেন। অনেক বিরুপ মন্তব্য সত্ত্বেও জনাব মুন্সী সততার আলোকে মাত্র তিন লাখ টাকায় ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে প্রথম বছরেই ৩৫ লাখ টাকা লাভ করেন। আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার মালিকাধিন প্রতিষ্ঠান ১.আরকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, ২. ক্লিন প্লানেট লিমিটেড, ৩. প্রাইম গ্যাস সার্ভিস,৪. কবির এন্টারপ্রাইজ, ৫. ইউ অ্যান্ড জে ট্রেড লিমিটেড। ১০০ জনের ও বেশী কর্ম কর্তা কাজ করে তার প্রতিষ্ঠানে ও মাস্টার রোলে শত শত কর্মী আছে। আরকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড তিতাস গ্যাস কোম্পানির নাম্বর ওয়ান কন্ট্রাকটর । ৩০০-৩৫০ টি ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান তার কোম্পানির সেবা গ্রহণ করছেন। এতো বিশাল ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠানের গ্যাস লাইন ইন্সটালেশন ও মেইনট্যান্স কাজ করছেন কারন হিসাবে তিনি তার ১.কমেটমেন্ট ও ২. সততা কেই মূল্যায়ন করেছেন। মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে বড় করেন কারন তার মাধ্যমে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করবে। নিসন্ধেহে ব্যাবসা কে আল্লাহ করেছেন বরকতময়। ১৫ই ডিসেম্বর-২০০০সালে জন্ম হয় ছেলে রুবায়তুল হক মুন্সীর। বর্তমানে মেয়ে ডাক্তার ও ছেলে একটি সমৃদ্ধ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। বড় ভাই কলেজের প্রিন্সিপল আর ছোট ভাই জহুরুল হক মুন্সীর প্রতিষ্ঠান এ কর্মরত আছে। দুইটা বোন টি.এন.টি. ও বি.আর.ডি.বি. কর্মরত আছে। তার প্রতিষ্ঠাপন করা “ইউ অ্যান্ড জে টেড লিমিটেড” এর চেয়ারম্যান হিসাবে তার জীবনসঙ্গিনী স্নাতক পাশ করা ফিরোজা হক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে মেয়ে ডাঃ মনিরা হক মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে রপ্তানি করা হচ্ছে। যা প্রান্তিক পর্যায়ে অনেকের কর্ম সংস্থান হচ্ছে। কর্মবীর এই মানুষটি মনে করেন, যেকোনো ব্যক্তি সফল হবে যদি সে, কাজকে ভালবাসতে পারে কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারে এবং সততার সাথে কাজ করে। ভাষা শেখার বাপারে ইংরাজী কে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলার পরিবর্তে ইংরাজী হলে অনেক মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠতো যা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে একটি বিপ্লব সাধিত হত বলে মনে করেন। দক্ষিন এশিয়ার ভিতরে ইন্ডিয়া সহ যারা যত দ্রত ইংরেজীকে বুকে লালন করেছে, তারা খুব দ্রুত অগ্রসর হয়েছে৷ অপরদিকে নানা প্রতিবন্ধকতায় আমরা পিছিয়ে পড়েছি; যার কারণে তথ্য প্রযুক্তির যুগে দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করতে ভাষা শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি রপ্ত করত সকল যশোর পলিটেকনিক এর সকল শিক্ষার্থীদের কে ইংরাজী ও প্রযুক্তির উপডব় জোড় দিতে উৎসাহিত করেছেন। প্রাণও হাসসৌজ্জল ও ধর্মভীরু মানুষটির সাথে কথা বলে বোঝা যায় কতটা সরলতা এবং কাজ প্রিয় মানুষ তিনি। সব কিছুতে মহান রাব্বুল আলামিন এর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও অপরিসীম ভালবাসা। ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক এই মানুষটির রয়েছে সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে; সবাই কে মানুষের কাতারে দেখতেই বেশি ভালবাসেন। তিনি ২০১৩ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন , তাছাড়া ভারত ও নেপাল ভ্রমন করেছেন। শুরু করা কাজটাকে শেষ করা, হেরে যাবার ভয়তে কাজ বন্ধ না করে আরো উদ্দামে কাজ করে সফলতার মন্ত্র হিসাবে অভিপ্রায় করেছেন। জহুরুল হক মুন্সী একজন সমাজ সেবক ও দীন-দ্বরদী মানুষ। তিনি যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনীর জেনারেল সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৫. বিশিষ্ট কবি জনাব হাফিজুর রহমান:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে সফলতার গল্প ০৫: মোঃ হাফিজুর রাহমান “ফুলে ফুলে ভরে দেব ভরের বাগান। তুমি দেখে নিও- দক্ষিণা বাতাস যদি ফিরে আসে আমি আসব।“ আথবা, “মানুষ হয়ে এসব স্বপ্ন এ জনমে মিটবে না তাই পর জনমে তুমি আমি পাখি হয়ে জন্ম নিব।“ এমন শত কবিতার ভীতর কবি তার শুপ্ত কবি প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি প্রকৃতি, দ্রোহ, প্রেমময় রোমান্টিক ও মুক্ত মনের কবি। মোঃ হাফিজুর রাহমান কবিতা অঙ্গনে “হাফিজ রাহমান” নামে পরিচিত । ১৯৫৯ সালের ২০ শে জানুয়ারী মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার ডুমুড়শিয়া গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষি পরিবারে সম্ভ্রান্ত মোল্লা বংশে তার জন্ম। বাবা সফিউদ্দিন মোল্লা ছিলেন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে ও কৃষি কাজ করতেন এবং মাতা আছিরন নেছা ছিলেন গৃহিণী। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে হাফিজ ছিল বড়। ১৯৬৭ সালে ডুমুড়শিয়া প্রাইমারি স্কুলে তার পড়াশুনার যাত্রা শুরু হয়, অতান্ত মেধাবী হাফিজ পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে। ১৯৭২ সালে ভর্তি হয় ডুমুড়শিয়া ডি.সি.উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাচা মৌলোভী জয়নাল আবেদিনের অনুপ্রেরণায় মাধ্যমিকে থাকতেই সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করতেন।ওই সময় অত্যান্ত মেধাবী হাফিজ ডুমুড়শিয়া ডি.সি. উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে মনোনীত হন। অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি লাভ করে ও এস.এস.সি তে ৬৬১ মার্ক লাভ করে। অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের পরামর্শে তিনি যশোর পলিটেকনিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। যশোর পলিটেকনিকে অধ্যায়ন কালে হাফিজ রাহমান নামে যশোরের দৈনিক রানার, স্ফুলিঙ্গ ও খুলনার প্রবাসী পত্রিকায় কবিতা লিখতেন। তার কবিতার ভীতর উল্লেখ যোগ্য ছিল- “ওগো মোর নির্দয়া পাষাণী প্রিয়া প্রতীক্ষার শেষ সীমা গেলো শেষ হয়ে, তবুও তোমার কোন স্নিগ্ধ ছায়া লাগিল না আমার এ তপ্ত হৃদয়ে। “ আবার কখনো বা হতাশ হয়ে, বিরক্ত হয়ে লিখেছেন, “চারিদিকের বড় দুঃসময় এখন পাশা পাশি বাস, তবু দুরুত্তের নদী বড় ব্যাপক।“ ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের সামনে উপস্থিত হয়ে লিখেছেন, “নির্জন বিকালের পড়ন্ত রোদে শহীদ মিনারের সামনে থমকে দাঁড়ালাম। অজস্র বুনো ফুল-রক্তাক্ত সবুজ ছেয়ে আছে সৌরভে শুধু।“ মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার ওপর ভিত্তি করে লিখেছেন, “প্রত্যহ স্বপনে দেখি- অসংখ্য লাশ, দগ্ধ, অর্ধ-দগ্ধ, বা গলিত পচা লাশের ওপর শুয়ে আছি।“ তিনি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু যশোর পলিটেকনিকে মাগুরার ছাত্র ছাত্রীদের জাসদ ছাত্রলীগের দাপট বেশী ছিল। জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীদের অনুরোধে তিনি ১১ জানুয়ারী ১৯৮০ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। সে সময় ছাত্রদের নির্বাচনে মাত্র দুই ভোটের বাবধানে জনাব ফারুকুজ্জামান কে পরাজিত করেন। তার কবিতার আদর্শ হিসাবে “আলী ইদ্রিস” কে গুরু হিসাবে মানেন। ১৯৮৪ সালে তিতাস গ্যাসে কর্মজীবন শুরুর পর আর সাহিত্য চর্চার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আশির দশকে লেখা সেই সব কবিতা নিয়ে তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “ফিরে আসি প্রতিদিন” প্রকাশিত হয়েছে। মূলত আশির দশকের দ্রোহ ও প্রেমের কবিতা নিয়েই এই কাব্য গ্রন্থ। তিনি ২৭শে নভেম্বর ১৯৮৭ সালে রাজিয়া সুলতানাকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহণ করেন। ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ সালে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখেন রেজায়ানুল হাফিজ (চন্দন)। বর্তমানে চন্দন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত আছে। ১২ জানুয়ারী ১৯৯৬ সালে ছোট ছেলে রায়হানুল হাফিজ (সৌরভ) জন্ম গ্রহণ করে। বর্তমানে এমআইএসটি তে কম্পিউটার বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করছে। ২০১৪ সালে ব্রেন ষ্টক করেন তারপর আবার পুর্নৌদ্দামে আবার কবিতা চর্চা শুরু করেছেন। অতান্ত সুখী পরিবারে এক ধরনের সাহিত্য পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে; ফলে তিনি আবার সাহিত্য অঙ্গনে ফিরে এসেছেন এবং এখন বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাই তার কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে। কবি হাফিজ রাহমান বাংলাদেশের অনেক গুনি কবিদের সান্নিধ্য অর্জনে সক্ষম। নিয়মিত সাহিত্যর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন। তাই “এবং মানুষ” নামে একটা কবিতার পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন। তাছাড়া তিনি অনলাইন ও ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে যেমন, “শাব্দিক”, “এবং মানুষ” এ নিয়মিত লিখছেন। তিনি মনে করেন যে মানুষের ভিতরে সাহিত্য বা কবিতা কে পোষণ করতে পারবে সে একজন সত্যিকারের নাগরিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।২০১৫ সালে সস্ত্রীক হজ পালনের উদ্দেশে সৌদিআরব যান। তাছাড়া তিনি থাইল্যান্ড ও ভ্রমন করেছেন। নতুনদের কে তিনি ১. বানান সচেতন, ২. চিত্রকল্প ও ৩. ভাবার্থ নিয়ে চর্চা করার মাধ্যমে কবিতা বা সাহিত্য অবদানের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি রাজিয়া-হাফিজ ফাউন্ডেশন নামে একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান করার মহতি উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যখন তার কর্ম জীবন শেষের দিকে, তখন তিনি যে উদ্যমে আবার সাহিত্য চর্চা শুরু করেছেন এটা যে কত বড় পেরনা হবে নতুন দের জন্য তা অকপটে স্বীকার করতে কোনো দিধা নেই। অনেক তা শেষ বিকালের সূর্যের কিরণের ভালবাসা মাখা সোনালী হাসি। তার কবি প্রতিভা বাংলার সাহিত্য কে আরো সমৃদ্ধ করবে, এটা নিষন্ধে বলা যাই। সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনিতে দায়িত্ব পালন করছেন। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত "হেমন্তে" কবিতার সুর ধরে আমরা আবৃতি করে বলতে পারি ....... "হেমন্তে হাঁটিনা আমি বহুকাল এই মেঠোপথে, ভোরের মিঠে রোদে ঘুমঘুম চোখে সেই কবে হেঁটেছিলাম!"
আলোকিত মানুষ : তারার
সন্ধানে
সফলতার গল্প ০১ : জনাব
আলী ইদ্রীস
এই পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয় যাদের কল্যাণকর কাজের কারনে মানুষের মনের মণি কোঠায় শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকে৷ যাদের মুখের কথায়, অনুপ্রেরণায়
মানুষ স্বপ্ন দেখে তেমনি একজন মানুষ জনাব ইদ্রীস আলী, তবে
সাহিত্য অঙ্গনে আলী ইদ্রীস নামে পরিচিত৷ এই ব্যক্তির পরিচয় দিতে হলে বলতে হয় একাধারে সফল শিক্ষক, সাহিত্যিক,
পুস্তক লেখক, কবি,
সংগঠক, উদ্যোক্তা,
নেতা, সাংবাদিক,
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বক্তা
ও মুক্তিযোদ্ধা৷ তিনি ১৯৫৬ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর যশোর শহরের মোমিননগর নওদা গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন৷ বাবার নাম মুন্সি মো: সায়েদ
আলী বিশ্বাস ও মাতা ফুলবিবি সায়েদ৷ আট ভাই বোনের মধ্যে সাত নং সন্তান ইদ্রীস৷ বাবার পেশা ছিল ম্যারেজ রেজিষ্টার ও কৃষি এবং মাতা গৃহিনী৷ বড় এই পরিবারটিতে অভাব অনটন ছিল নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার৷ ১৯৫৯ সালে প্রথম হাতে খড়ি ওঠে মোমিননগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ ছোট বেলা থেকেই সেভিং মাইন্ডের ছিল। অল্প কিছু পয়সা দিয়ে খেলার ছলে একটি খেলনা দোকান বানিয়েছিল। এইজন্যই হইত সরকারী চাকরি করলেও ব্যবসা তাকে ছাড়িনি। ১৯৬৫ সালে যশোর শহরের মোমিননগর নওদা গ্রামে সেনাবাহিনের মহড়া পরিদর্শন করতে আসেন আয়ুব খান, আজম
খান সাহসী ছোটো ইদ্রিস দুরু-দুরু মনে এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে করমর্দন করেন। আর এখন অনেকে তার সাথে করমর্দন করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন , কে
জানত কোনো মন্ত্রে দীক্ষা পেয়েছিল কিনা এই করমর্দনের ফলে।১৯৬৮ সাল থেকে অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই নাটক, আবৃত্তি
ও গল্প লেখা শুরু করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধর সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। সাহসী এই বালক সীমানা পারি দিয়ে ভারতে যায় মুক্তি যুদ্ধার পশিক্ষন নিতে কিন্তু ছোট বিধায় সতির্থরা তাকে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্থান এ ফেরত পাঠায়। যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে পুনরায় ভারতে যাত্রা করে এবার তাকে আর ফেরত আসতে হয় নি, প্রশিক্ষিত
হয়ে দেশে পাক হানাদারদের হটানোর জন্য যুদ্ধ করেছেন। একবার বাড়িতে খবর যাই তিনি যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, বাসায়
কান্নার রোল পড়ে যায়, বাবা-মা ছাগল মানত করেন, যাতে
ইদ্রিস ফিরে আসে। যশোর মুক্ত হবার পর তিনি খুলনার এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেচে যান কিন্তু একটি গুলি তার বাম কানের শ্রবণ শক্তি অনেকটা হ্রাস করে যার কারণে এখনে বাম কানে কম শোনেন। অস্ত্র জমা দেবার সময় একটি ঘোষণা ছিল যে, যারা
যারা অস্ত্র জমা দিচ্ছে তার চাইলে সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ পাবে কিন্তু ইদ্রিস অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন তাই চাকরি না করে আবার পড়াশুনা করার জন্য মনোনিবেশ করেন। পরবর্তী যশোর মুসলিম একাডেমির বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৭২ সালে এস এস সি পাশ করেন৷ এস এস সি পাশ করার পর শুরু হয় নতুন জীবন, যুদ্ধ
পরবর্তী বিধ্বংশ্ব দেশের অভাবী সংসারে যখন সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে তখন কি ভাবে পড়াশুনা? তাই
স্বপ্রণোদিত হয়ে হাতে কলম তুলে নেন, স্থানীয়
দৈনিক পত্রিকায় লিখে যে রোজগার হত সেই উপার্জিত টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাত। যুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২-৭৩ সালে খান টিপু সুলতান এর সম্পাদনায় “বিপ্লব”
পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় যাত্রা শুরু। তারপর যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ছাত্র থাকা কালীন ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক "মাতৃভূমি" পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সাপ্তাহিক "গণমানুষ" এর সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮-৮২ সাল প্রজন্ত সাপ্তাহিক "বহ্নি" পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। সেই সময় যশোরের "বর্ণ-দীপ্ত" সাহিত্য গোসটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ।
রমেশ রায় , আনোয়ারুল
ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধার সহযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকুর উৎসাহে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ভর্তি হন। । ইদ্রিস এর লেখা নাটক যশোরের তসবীর মহলে বেশ কয় একবার মঞ্চস্থ হয়েছে। ইদ্রিস যশোর সাহিত্য সংঘ স্থাপন করেন এবং সেই সময় ১৯৮০ সালের দিকে টিকিতের বিনিময়ে কবিতা আবৃতির প্রথম একটি প্রোগ্রাম করেন যে প্রোগ্রামে নামকরা অনেক কবিদের মিলনমেলা হয়েছিলো। যশোর সিটি কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইস এস সি পাশ করেন৷ তার পর বন্ধু রমেশ রয়, আনোয়ারুল
ইসলাম ও কামরুজ্জামান টুকুর উৎসাহে ১৯৭৫ সালে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিভিল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন৷ ইদ্রিস আলী একজন সময় সচেতন বিদগ্ধ লেখক ও কবি হিসাবে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ব্যাপক জনপ্রিয়তা দ্রুত যশোর পলিটেকনিক বাকাছাপের সাধারন সম্পাদক ও কেঁদ্রীয় বাকাছাপ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক র্নিবাচিত হন৷ কিছুদিন পর উচ্চ শিক্ষার আন্দোলন শুরু করে আই ডি ই বি, বপশিস
তাদের সাথে যুক্ত হয় বাকাছাপ৷ ০৯ মাস আন্দলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় পুলিশের খাতায় নাম উঠে ফলে কুমিল্লার ময়নামতি ছাত্রাবাসে ১৫ দিন আত্নগোপনে থাকেন৷ আন্দোলন আরও বেগবান হয় ফলে সরকার বাধ্য হয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চ শিক্ষার দাড়৷ প্রথমে সাত রাস্তা মোড়ে টি টি সি তে প্রাথমিক ভাবে ও পরে গাজিপুরের ডুয়েট এই আন্দোলনেরই ফল, এই
জায়গায় একটি পলিটেকনিক কলেজ হওয়ার কথা ছিল৷ এক বছর শিক্ষাবছর লস হয় ফলে ১৯৭৯ সালে ডিপ্লোমা পাশ করেন৷ তার পর ১৯৮০ সালে যশোর পলিটেকনিকে শিক্ষক হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করেন৷ তার স্পষ্ঠবাদিতা ও সততার কারনে জুনিয়র হওয়া সত্বেও বাপশিস এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা৷ অডিটোরিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তৎকালিন
অধ্যক্ষ সাহেব তরুন ইদ্রিস কে অডিটোরিয়াম নির্মাণকারীদের কাছ থেকে নির্মাণ সমগ্রী নিয়ে এবং শিক্ষকরা যদি এক বছর পরীক্ষা ডিউটির টাকা না নেয় তবে পলিটেকনিক প্রঙ্গনে একটি প্রাইমারী বিদ্যালয় স্থাপন করা যায়৷ তরুন ইদ্রিস মহৎ উদ্যোগে একমত পোষন করেন৷ প্রাইমারী স্কুল স্থাপিত হয় কিন্তু অন্যান্যদের কাছে না শুনে সম্মতি দেওয়ায় অনেকের কাছে অপছন্দের পাত্র হয়ে যায়৷ তৎকালীন ছাত্রদের কাছে ব্যাপক সন্মান তাকে অন্যদের কাছে চক্ষুশূলে পরিনত হয়৷ ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকে সাধারণ ছাত্রদের অসুবিধা বিবেচনা করে মাতৃভাষায় পান্ডুলিপি তৈরী করেন ৷ তাকে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকার “প্রতুশ্রতি”
কবিতার জন্য ‘ জাতীয়
তরুণ কবি” খেতাবে
ভূষিত করেন। এক কবিতার আসরে তাকে রক্তাত্ব নির্যাতনের সম্মক্ষিন হতে হয়৷ ফলে সত্যনিষ্ঠ এই শিক্ষককে নিজ এলেকা ছেড়ে ঢাকা পলিটেকনিকে চলে আসেন৷ ১৯৮৪ সালে যশোরের বারান্দী পাড়ার জাহিদ ইদ্রিস আর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বর্তমানে এম.এ. এম.এড. এ
গ্রাজুয়েশন করা জাহিদ ইদ্রিস ঢাকা পলিটেকনিক প্রাইমারী স্কুল এ প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছে। ১৯৮৫ সালে প্রথন সন্তান পরশ জন্ম গ্রহণ করেন। দিতীয় সন্তান পল্লব ১৯৯০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ৯৩-৯৪ সালে সরকার কতৃক বাংলা পান্ডুলিপি সংগ্রহের আহবান করেন৷ জনাব ইদ্রিস ওয়াটার সাপ্লাই ইঞ্জি, সিভিল
ইঞ্জি সহ পাঁচটি পান্ডুলিপি জমা দেন ফলে প্রতিটি পান্ডুলিপির জন্য পঞ্চাশ হাজার করে টাকা দেন৷ আড়াই লাখ টাকা দিয়ে বাংলাবাজার প্রতিষ্ঠিত করেন "পরশ প্রকাশনী"৷
সম সাময়িক কালের ঘটনা পুঞ্জ তার হৃদয় ছুয়ে গেছে ।
তারই প্রকাশ আমরা লক্ষ্য করি “যাই
বললেই হয়না যাওয়া” কবিতা
গ্রন্থে ও “ সুখের
মতো অসুখ” গল্পগ্রন্থে।
পাশাপাশি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের করুন জীবন সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের দোর্দণ্ড উত্থান দেখে ব্যথিত হয়েছেন। তাই তিনি “আমি
একাত্তরের কথা বলছি” বইয়ে
মুক্তিযুদ্ধের নিরপেক্ষ ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তুলে এনেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের করুন জীবন কাহিনী ও বীরত্ব গাঁথা। ২০০০ সালের দিকে সরকার উপলব্ধি করেন শুধু সরকারী পলিটেকনিক দিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠী কে কারিগরি শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয় তাই বেসরকারি পলিটেকনিকের স্থাপন এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তরুণ শিক্ষক ইদ্রিস আলীর ইনভেস্টিগেশন দায়িত্ব দেয়া হয়; নাটোর,
গাইবান্ধা, রাজশাহী
আঞ্ছলের। ২০০১ সালে ৫ জন অংশীদার মিলে ঢাকার ফার্মগেটে প্রতিষ্ঠিত করেন "ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট"।
যেখানে ৩৫০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। ২০০৩ সালে ফরিদপুর "ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের" শাখা স্থাপন করেন ।
এখানেও ১০০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। তিনি উপলব্ধি করেন যশোর এলাকায় কোন উদ্যোক্তা নেই; যে,
বেসরকারি পলিটেকনিকের স্থাপন করবে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে বিনা পুঁজিতেই ২০০৩ সালে যশোরে স্থাপন করেন "যশোর টেকনিকাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ"।
প্রথম ৮ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে এস এস সি(ভোক) এর
কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট অনুমতি পায়। এরপর এইচ এস সি(ভোক), বি
এম, এবং
ডিপ্লোমা প্রকৌশল এর বিভিন্ন বিভাগ আছে। বর্তমানে ২০০ এর ও বেশী ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে এবং শিক্ষক আছে ১২ জন। ২০০৪ সালে মডেল পলিটেকনিক ইন্সিটিউট নামে যশোরে বেসরকারি পলিটেকনিকের স্থাপন করেন। যেটি বর্তমানে যশোরের ভিতর সবচাইতে বৃহত্তম বেসরকারি পলিটেকনিক। এখানে সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, টেক্সটাইল সহ ৮ টি বিভাগ চালু আছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদান চালু আছে যার কারণে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা ৮০০ টাকা করে পায়। ৬০ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১২০০ ছাত্র-ছাত্রীপড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে। ২০০৫ সালে যশোর মেডিকেল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৭ সাল একুশে বই মেলা উপলক্ষে খুলনা বিভাগীয় সরকারী গণ গ্রন্থাগার কর্তৃক সাহিত বিশেষ অবদানের জন্য তাকে “কাব্য
ভূষণ এম এ রাজ্জাক পদক” এবং
২০০৮ সালে খুলনা সাহিত্য একাডেমী “স্বাধীনতা
পদক-২০০৮” প্রদান
করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও সাহিত্য কর্মে অন্যান্য অবদানের জন্য ২০০৯ সালে তাকে বিশ্ব মানবধিকার সোসাইটি কর্তৃক “বিশ্ব
মানবাধিকার স্বর্ণ পদক” দেয়া
হয়। ২০১২ সালে ঢাকার ফার্মগেটে "ইউনিভাসাল পলিটেকনিক ইন্সিটিউট" নামে একটি পলিটেকনিকের মালিকানা ক্রয় করেন। এখানেও ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। ২০১৩ সালে মানিকগঞ্জে "ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের" শাখা স্থাপন করেন ।
এখানেও ১০০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। ন্যাশনাল ও ইউনিভার্সাল পলিটেকনিকে ২০০ জনেরও অধিক শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত আছে। বর্তমানে মানিকগঞ্জে একটি এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নাম একটি ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য কাজ করছেন। তিনি ২০১২ সালে হজ্ব পালন করেন, এছাড়া
তিনি ভারত, নেপাল,
শ্রীলংকা, সৌদি
আরব, ইউনাইটেড
আরব এমিরাত, ইন্দোনেশিয়া,
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময় জাতীয় ও সামাজিক কার্যক্রম এ ভুমিকা রাখেন যার সংক্ষিপ্ত তথ্য গুলো হলো : সভাপতি,
বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি, কেনিক,
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদকঃ আই ডি ই বি, কেনিক,
যুগ্ন সম্পাদকঃ বাকাছাপ, কেনিক,
সাধারণ সম্পাদকঃ যশোর পলিটেকনিক ইন্সিটিউট, সভাপতি,যশোর পলিটেকনিক প্রক্তনী, ঢাকা,
সম্পাদকঃ খেলাঘর, কেনিক,
সাধারণ সম্পাদকঃ খেলাঘর, যশোর,
এছাড়া সংবাদিক হিসাবে তার ভুমিকা রয়েছে: নির্বাহী
সম্পাদকঃ সাপ্তাহিক মাতৃভূমি, গণ
মানুষ ও বহ্নি পত্রিকা(যশোর),স্টাফ
রিপোর্টরঃ সাপ্তাহিক সমাচার সমীক্ষা, বিপ্লব
ও নতুন দেশ, দি
কারিগর পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে বর্তমান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যশোর পলিটেকনিক কে নিয়ে অনেক পজেটিভ চিন্তা করেন তাই প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী দের কে নিয়ে গঠন করেছেন "যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনী"।
যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মনে করেন একজন ব্যাক্তি কে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা উচিত। ভবিষ্যতের পৃথিবীটা হবে গ্লোবায়জেষণ অর্থাৎ যে কোনো ব্যক্তি তার যোগ্যতা অনুসারে যে কোনো দেশে চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবে কিন্তু আমাদের যদি উদ্দম , উত্সাহ
, সাহস ও সততা না থাকে তবে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারব না। আমাদের কে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে মাথা উচু করতে হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মত মনোবল থাকতে হবে। সাংগঠনিক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, সংগঠনে
সময় মেধা ও অর্থ বায় করলে , নিজেকে
ভালো অবস্থানে পৌছানো সম্ভব বলে মনে করেন।
২. বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব ফারুকুল ইসলাম:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে
সফলতার গল্প ০২: মো: ফারুকুল ইসলাম ‘সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা, তিনি মানুষকে এতো সুন্দর রুপে সৃষ্টি করেছেন । সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি, মানুষের পরিবেশ বিকাশে যা যা প্রয়োজন, তা সব কিছুই সুবিনাস্ত করেছেন। বিনিময়ে তিনি শুধু তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রাপ্ত বয়সে কর্মজীবনে চেষ্টা করলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। আমি একথা অকপটে স্বীকার করি যে, মানুষের জীবনে কষ্ট না আসলে তার সুখের বিস্তৃতি ঘটে না এবং সুখ অনুভব করা যায় না। যে মানুষ এই কথা বলতে পারে তার সম্পর্কে সহজেই বলতে পারি তিনি একজন ধর্মভীরু, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, বিবেকবান, দায়িত্বশীল, কর্মঠ, সৎ ও আদর্শ মানুষ৷ মোঃ ফারুকুল ইসলাম ১৯৬২ সালের পহেলা নভেম্বর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন৷ বাবা আব্দুর রশিদ মিয়া পেশায় ডিপার্টমেন্টাল ব্যবসায়ী ও মা আসিয়া বেগম গৃহিনী৷ মো: ফারুকুল ইসলামের ডাক নাম “ফারুক”। ৬ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ফারুক ছিল চতুর্থ । শান্ত শিষ্ট ছেলেটি কে ১৯৬৮ সালে আমতৈল প্রাইমারি স্কুল এ ভর্তি করা হয়। অংকে অত্তাধিক মেধাবি ছিলো, এই জন্যই মনে হয় গুণী জনেরা বলে পৃথিবীতে অংকের কদর সবচেয়ে বেশী, যদি তুমি অংক বোঝ; তাহলে তুমি সব পারবে। এরপর আমতৈল বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে কীর্তিতর সাথে এস.এস.সি পাশ করে। কিন্তু অভাবী সংসারের কারনে দ্রুত চাকরী করা যাবে, এমন কোন জায়গায় শিক্ষা নেবার ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়। পরবর্তী বন্ধু দের কাছে শুনতে পারে পলিটেকনিকে ভর্তি হলে তাড়াতাড়ি চাকুরী পাওয়া যাবে। সেই সময় উচ্চ শিক্ষার আন্দোলনের কারণে ভর্তি হলেও ক্লাস বন্ধ থাকায় শ্রীপুর কলেজ থেকে ইতিমধ্যে এইস.এস.সি পাস করেন। ১৯৮০ সালে পলিটেকনিকে ক্লাস শুরু হল। কিন্তু পড়াশুনায় প্রথম দিকে একটু আলসটা ছিল তাই তো সিরাজ উদ্দিন আহমেদ স্যার এর মেটালজি ভাইভা পরীক্ষার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ছিলেন পরবর্তী বন্ধুদের মাধ্যমে অবগত হয়ে; স্যারের বকুনি খাওয়ার পর পুনরায় ভাইভা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। রক্তে ছিল নেতা হবার বাসনা কারন দাদা আসগর হোসেন মৌলভী ছিল স্বদেশী আন্দলেনের অনেক বড় নেতা। কোন নির্বাচন না করলেও জাসদ ছাত্র লীগ এর একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। পলিটেকনিকে সকল শিক্ষক ছিল পরম শ্রদ্ধার পাত্র কিন্তু সিরাজ উদ্দিন আহমেদ স্যার ছিল তার কাছে আদর্শের বাতিঘর আর মুস্কিলে আসান । ১৯৮৩ সালে পলিটেকনিক থেকে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকয় আসেন জীবন জীবিকার তাগিদে। শামস্ গার্মেন্টস লিমিটেডে মাত্র ২৫০ টাকা মাসিক বেতনে “রক্ষণাবেক্ষণ সাহায্যকারী (মেইনটেনেন্স হেল্পার)” হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জনাব ফারুক বুঝতে পারেন গার্মেন্টস শিল্পে প্রডাকশন ও মার্চেন্ডাইজারের ভবিষ্যৎ ভাল; তাই যতো দ্রুত সম্ভব ট্রাক পরিবর্তন করতে হবে। এক বছর পর বন্ধু আসাদের (বর্তমানে আসাদ রেডিসন গ্রুপের সত্ত্ব্ধিকারী)সহযোগী হিসাবে ৪৫০০ টাকা বেতনে রাসেল গ্রুপ এ এ্যাসিসট্যান্স প্রডাকশন ম্যানেজার পোষ্টে যোগদান করেন। দারুন কর্ম- দক্ষতা প্রদর্শন এবং পরিশ্রম করতে থাকে। আরও ভাল করার জন্য দুই বছরের মধ্যে কোম্পানি পরিবর্তন করে আনিছুর রাহমান সিনহার ওপেক্স গ্রুপে প্রডাকশন ম্যানেজার হিসাবে ১৯৮৫ সালে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালের ৯ ই অগাস্ট পারিবারিক সিদ্ধান্তে আসমা বেগম (কনক) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাংলায় মাস্টার্স করা জীবন সঙ্গিনী সব সময় স্বামীর পাশে থেকেছেন ছায়ার মত। একজন ফারুকুল হতে হলে তার গল্পে একজন আসমা বেগমের ও প্রয়োজন। জনাব ফারুক ও কনক বেগমের কোলে ১৯৯৩ সালের ৪ই নভেম্বর ছেলে নাবিল বিন ফারুক (ঈশান) এর জন্ম হয়। বর্তমানে ঈশান অস্ট্রেলিয়ার, পার্থ এ অবস্থিত এডিট কাউন্ট ইউনিভার্সিটি তে একাউন্টস ম্যানেজমেন্ট এ গ্রাজুয়েশন করছে। প্রতিটা ভাগ্যবান মানুষের একজন আদর্শিক থাকে যার পরম ভালবাসা ও স্নেহ উন্নতির চরম শিখরে তুলতে পারে। “যে রাতকে, দিন; আর দিন, কে রাত বললেও” , সেটা অবলীলায় স্বীকার করত জনাব ফারুক। বিক্রমপুরের সম্ভ্রান্ত “সিনহা পরিবারের” আনিসুর রহমান সিনহা "ওপেক্স গ্রুপ" এর মালিক; তাকেই গুরু বলে মানতেন এখনো তাকেই অনুসরণ করেন৷ ফারুকুল ইসলাম এর অন্ধ বিশ্বাস, পরিশ্রম, সততা ও কাজের প্রতি ভালবাসা তাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি জনাব ফারুকের আরো দুই ভাই জনাব হারুক আহমেদ ও জাহিদ আহমেদকে তার ওপেক্স গ্রুপ এ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তাদের দক্ষতা ও কমিটমেন্ট এ সন্তুষ্ট হয়ে জি. এম. মর্যাদায় উত্তীর্ণ করেছেন। জনাব আনিসুর রহমান এর আশির্বাদের হাত মাথায় ছিল বলেই আজ অনুরিমা গ্রুপের কর্ণধর হতে পেরেছেন জনাব ফারুকুল ইসলাম। ১৯৯৫ সালের দিকে বন্ধুদের সাথে করে গার্মেন্টস ব্যবসা করবে বলে মনস্থির করেন। সংগ্রহে থাকা লক্ষাধিক টাকা দিয়ে শুরু করে ব্যবসা। কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসায় ভরাডুবি ঘটে। এই জন্যেই হয়ত তার বাবা বলত, "বৌও এর থেকে যাকে বেশি বিশ্বাস করতে পারবে, তার সাথেই পার্টনার এ ব্যবসা করবে।" বাস্তব অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে পারলে তার বিজয় অবসম্ভাবী। ছোট বেলায় আমার নানা বলত সিধান্ত নিবে তিন মাথা যার তার কাছ থেকে। এখন বুঝি তিন মাথা কি? তিন মাথা হলো একজন মুরব্বি যে হাটু গেড়ে বসে এবং দুই হাটুর মাঝে মাথা থাকে ; দুই পায়ের হাটু আর মাথা একসাথে করে রাখে বলেই তিন মাথা বলে। সে একজন সময়ের কাছে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞতা সম্পন্ম লোক। সেই ভাগ্যবান যার মাথায় জ্ঞানীদের হাত আছে , সেই ভাগ্যবান যার পরামর্শদাতা আছে, সেই ভাগ্যবান যার সততা আছে। মনোবল হারায়ে ফেলে কিন্তু জনাব ফারুকের ভালবাসার লোক ছিল, ছেলের মতই তাকে অতান্ত স্নেহ করত; এককথায় তাকে আগলে রাখত জনাব আনিছুর রহমান সিনহা। ১৯৯৮ সালের ২৮ শে এপ্রিল আসমা বেগমের কোলে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অত্যান্ত আদরের মেয়েটির নাম রাখা হয় সুমাইয়া আফরিন (উর্বি)।উর্বি এখন ভিকরুনন্নেসা কলেজে এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ১৯৯৯ সালে আবার পূর্ণ উদ্দ্যমে জনাব বাবু খানের (রাইজিং গ্রুপ) সাথে পার্টনার এ ব্যবসা শুরু করেন পাশাপাশি ওপেক্স গ্রুপে চাকরি করতে থাকেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান “ডি এম সি আপেরালস লিমিটেড”, যিনি নিজেই চাকরী খুঁজে বেড়াতেন তার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান এ বর্তমান ১৫০০ জনের ও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০০ সালে চাকুরীর পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। শুরু হয় ব্যবসায়ী ফারুকুল ইসলাম হয়ে ওঠার গল্প। ২০০১ সালে তিন জন মিলে আশুলিয়ায় “অরুনিমা স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড” নাম একটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস। যাতে বর্তমান ৬০০০এর ও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “এ কিউ এন বিজনেস এসোসিয়েট লিমিটেড”; যাতে বর্তমান ৬০-৬৫ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। ২০০৭ সালে ভাই দের সাথে করে মিরপুরে “ট্রিপল সেভেন আপেরালস লিমিটেড” নাম একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস তৈরী করেন। যাতে বর্তমানে ২০০০ এরও অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালে সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য নিজ গ্রামে ৬০০০ মানুষের কর্মসংস্থান দাড় খুলতে ইন্ডিয়ান এক ভদ্র লোকের সাথে করে “সান আপেরালস লিমিটেড” নাম একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস তৈরী করেছেন। প্রায় ২০,০০০ মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা, কঠোর পরিশ্রমী, চ্যালেঞ্জিং ও অমায়িক ব্যক্তিত্ব জনাব ফারুকুল ইসলাম মনে করেন তার উন্নয়নের জন্য যে বিষয় গুলো খুব গুরুত্ব পূর্ণ তা হলো, ১. কমিটমেন্ট ২. পরিশ্রম ও ৩. সততা । তিনি ইউরোপের দশ-বারটি দেশ সহ ভারত , চীন, ব্যাংকক, হংকং, থাইল্যান্ড , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া, জাপান ভ্রমন করেছেন। ২০১৩ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন। ব্যক্তি জীবনে কর্মব্যস্ত এই মানুষটি অবসর ঘুমায়ে কাটান। তিনি মনে করেন একজন নতুন উদ্যোক্তা কে নিম্নের কাজ গুলো করলে অবশ্যই উন্নতি করবে। ১. নতুন ধরনের কোনো ব্যবসা শুরু করা , যেটা এখনো শুরুই হয় নি। যেমন হতে পারে কৃষি পণ্য প্যাকেজিং করে রপ্তানি করা, জ্বালানী উৎপন্ন করা যাবে এমন কোনো প্রকল্প করা ইত্যাদি। ২. চ্যালেঞ্জিং মনোভাব তৈরী করা। ৩. পরিশ্রম ৪. গ্রাম ভিত্তিক ব্যবসা ৫. দায়িত্ববোধ ৬. সততা ও ৭. কমিটমেন্ট রক্ষা করা। তিনি ব্যক্তি জীবনে একজন পরহেজগার মানুষ ও দানশীল হিসাবে যথেষ্ঠ পরিচিত। গ্রামের একটা হেফজ খানায় ২০-২৫ জন এতিমকে ভরণ পোষণ করছেন। ভিক্ষা বৃত্তিকে কে তিনি অপছন্দ করেন। প্রতিটা মানুষের বিশেষ গুন থাকে তেমনি জনাব ফারুকের আছে যেকোনো মানুষকে সহজেই আপন করার মত এক অসম্ভাবী গুনাবলী। মিষ্টভাষী ও মিশুক মানুষটির সরণশক্তি খুব প্রখর ১০০০ এর ও বেশি মোবাইল নম্বর মুখস্থ বলে দিতে পারে নির্ভুল ভাবে। প্রাণবন্ত জনাব ফারুক মন খুলে সকলের সাথে কথা বলেন তবে ব্যবসায়ী দিক থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন। যশোর পলিটেকনিকের প্রতি তার আছে বিশেষ দুর্বলতা। পলিটেকনিকের বন্ধুদের কে এখনো তিনি মনে প্রাণে ভালবাসেন। তাই তো শত বাস্ততার মাঝেও যশোর পলিটেকনিকের যেকোনো প্রোগ্রাম এ তিনি ছুটে আসেন। তিনি যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনীর কার্য নির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা।
৩.বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব আসাদুজ্জামান
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে
সফলতার গল্প ০৩ : জনাব কে এ এম মো: আসাদুজ্জামান
যশোর পলিটেকনিকের প্রতিষ্ঠিত যে কয়জন সূর্যসন্তান আমাদেরকে অনুপ্রণীত করে তাদের মধ্যে অন্যতম হল আসাদ যার অভিধানিক অর্থ হল সিংহ৷ নিরংকার, মনখোলা স্বভাবের এই মানুষটির আছে যশোর পলিটেকনিকের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা
৷ শিক্ষা কখনো কাউকে প্রতিষ্ঠিত বা সমাজের বিত্তবান শ্রেণীর লোক বানাতে পারে না কিন্তু তা অর্জনের যোগ্য করে তুলতে পারে, যদি কেও সেটা চাই৷ যে কোন মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তুমি কি হতে চাও? সে বলবে; আমি এই হতে চাই, ওই হতে চাই ইত্যাদি৷ আমি এখন কি আছি? সদ্য ডিপ্লোমা পাশ করা এক সম্ভাবনাময় তরুণ৷ কিন্তু কি চাই? কোটি টাকার মালিক হতে! বলাটা বা চিন্তা করাটা কয়েক সেকেন্ডে সম্ভব কিন্তু বাস্তবতা নিষ্ঠুর, বর্বর৷ কযেক সেকেন্ডের মধ্যে চাওয়া স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে হয়ত কয়েক বছর বা কয়েক যুগ অথবা সারাজীবন লাগতে পারে হয়তবা নাও হতে পারে এর বাস্তবায়ন৷ কিন্তু কেউ এটা অর্জন করে, কিন্তু কিভাবে? কারন তারা তাদের লক্ষে পৌছানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিঞ্জ, আত্মবিশ্বাসী, চ্যালেঞ্জিং, পরিশ্রমী, অনুগত, সৎ , তদুপরী ভগ্যপুষ্ঠ ৷ তেমনি একজন জনাব আসাদ৷ ১৯৬২ সালের পহেলা জুন মাগুরার হাট শ্রীপুরস্থত তারা উজাইল গ্রামের মধ্যবিত্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন৷ বাবার নাম মো সাখাওয়াত হোসাইন খান, থানা শিক্ষা অফিসার হিসাবে সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন ও মাতা মতিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী৷ ১৯৬৯ সালে মোহাম্মদপুর প্রাইমারী স্কুলে পাঠের সূচনা ঘটে৷ চতুর্থ শ্রেণীতে থাকা কালীন বাবার চাকুরীর কারনে ঝিনাইদহের উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রণীতে ভর্তি হন৷ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন হরিনাকুন্ড থানার পার্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন আমতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ে, এখান থেকেই ১৯৭৭ এস এস সি পাশ করেন৷ ছয় ভাই দুই বোন, সবার বড় আসাদ৷ তিনি অবগত হলেন বন্ধু রাজ্জাকের মাধ্যমে , ডিপ্লোমা করলে দ্রুত চাকুরী পাওয়া যায়৷ এর আগে যারা পড়েছে তাদের কেউ বেকার নেই ৷ তাছাড় এই শিক্ষা গ্রহন করে চাকুরী করলে প্রতিষ্ঠান হতে মটর সাইকেল পাওয়া যায়৷ বেশ ভাল, পড়লে দ্রুত চাকুরী সাথে মটর সাইকেল৷ ১৯৭৭ সালে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ম্যাকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন৷ কিন্তু তাড়াতাড়ী আর হল না, হোস্টেলের পানির কারনে স্কিন প্রবলেম হলে এক বছর বন্ধ থাকে অাবার উচ্চ শিক্ষার আন্দোলনের কারনে শিক্ষা বছর আরো দুই বছর পিছায়ে যায়৷ পলিটেকনিকে থাকা কালীন জাসদ ছাত্র লীগ করতেন৷ ১৯৮৩ সালের পলিটেকনিক পাঠ শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন৷ বন্ধু রবি, পত্রিকার মাধ্যমে বিঞ্জপ্তি দেখে দুই বছরের ষ্টাম্প করে তৎকালিন কাওরান বাজারস্থ 'প্যারিস গর্মেন্টসে' মেইনটেন্যান্স ইন্জ্ঞিনিয়ার হিসাবে মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ তিন মাস পর ৮০০ টাকায় উর্ত্তীর্ণ হয়৷ যপই এর ড্রইং শিক্ষক মধুসুদন দে শিক্ষকতা ছেড়ে 'ষ্টাইল ক্রাফট লিমিটেড' এর ডাইরেক্টর হিসাবে চাকুরী করছেন৷ এই খবর শুনে তার সাথে দেখা করতে আসেন৷ ১৯৮৪ সালে তার গার্মেন্টসে ১৭০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ এক বছর পর মিন্টু নামের এক বড় ভাইয়ের অনুরোধে নারায়নগঞ্জের 'রাসেল গার্মেন্টসে' ৩৮০০ টাকা বেতনে প্রডাকশন ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন৷ অল্পদিনেই কর্মঠ আসাদ, মালিক আক্কাস উদ্দিন মোল্লার খুব বিশ্বস্থ হয়ে ওঠেন৷ কিন্তু ১৯৮৬ সালে চাকুরী ছেড়ে আনিছুর রহমান সিনহার 'ওপেক্স গ্রুপে' ৪৫০০ টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন৷ উদ্যম ও কঠোর পরিশ্রমে জনাব সিনহার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন৷
১৯৮৯ সালে ৮ই অক্টবর মাগুরার মোহাম্মদ পুরের ইয়াসমিন জামানকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহন করেন৷ আজকের এই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে মিসেস জামানের অবদান অকপটে স্বীকার করেন জনাব আসাদ৷ ১৯৯১ সালে সুখী দম্পত্তির কোল আলো করে আসেন ইসরাত জামান স্নিগ্ধা৷ স্নিগ্ধা বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই গ্রাজুয়েশন করছেন এবং জামাই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করছেন৷
১৯৯৬ সালে জান্নাতুল ফেরদৌস চাঁদনী পৃথিবীর বুকে জন্ম গ্রহন করেন৷ বর্তমানে চাঁদনী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এ-টু তে পড়াশোনা করছে৷ এরই মধ্যে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন৷ ২০০২ সালে তৃত্বীয় সন্তান রুপন্তি জামান ভূমিষ্টিত হয়৷ বর্তমানে দিল্লি পাবলিক স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড ফোরের ছাত্রী৷ ২০০৬ সালে রেডিশন ওয়াসিং প্লান্ট লিমিটেড নামে একটা ওয়াশিং প্লান্টের মাধ্যমে ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করেন; যাতে বর্তমান ৫০০ মানুষের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে ৷ কিন্তু তার অনুগত, পরিশ্রম ও সততার কারনে চাকুরী করা সত্বেও আলাদা করে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করার পরও পিতৃতূল্য জনাব আনিছুর রহমান সিনহা তাকে উৎসাহিত করেছে৷ জনাব সিনহার অনুকরনীয় আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটলে সত্যিকার অর্থেই এই দেশ আরো সমৃদ্ধি অর্জন করবে৷ জনাব সিনহা কর্মঠ অসাদকে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর(অপারেশন) এ পদন্নতি করেন৷ ২০০৯ সালে রেডিশন অ্যাপারালস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বেসিক টঙ্গীতে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ বর্তমানে ১৬০০ জনের অধিক কর্মসংস্থান হচ্ছে৷ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন রেডিশন গার্মেন্টস৷ যাতে প্রায় ১৬০০ জন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের জীবন জীবিকা পরি চালনা করছেন৷ ২০১২ সালে দীর্ঘ ২৬ বছর চাকুরী করবার পর সিনহা সাহেবের অনুমতি নিয়ে চাকুরীর স্তফাহ দেন ৷তিনি চায়না, ব্যাংকক, হংকং, জাপান, সিংগাপুর, মলয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মান ও ইতালি ভ্রমন করেন৷ তাছাড় ২০১০ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব যান৷ তিনি মনে করেন কঠোর পরিশ্রম, কমিটমেন্ট ও সততা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং নিজের গোল সেট করতে পারলে অবস্মভবী হবে তার সফলতা৷ তিনি একজন সমাজ সেবক ও দানশীল মানুষ৷ খোলাখুলি কথা বলতে খুব পছন্দ করেন ও দ্রুত মানুষের সাথে মিশতে পারার এক যাদুকরি গুন আছে৷ তিনি মাগুরায় একটি এতিমখানা পরিচালনা করেন৷
৪. বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব জহুরুল হক মুন্সী:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে সফলতার গল্প ০৪ : জনাব জহুরুল হক মুন্সী প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী সৌরভ মাহমুদ বলেছেন; অলস ব্যক্তিরা চাকরী করেন, পরিশ্রমীরা ব্যাবসা খোঁজেন। ছোট বেলায় আগুন জ্বালানো ম্যাচ বিক্রি করে মাত্র পাঁচ পয়সা লাভ করেন, ছোট্ট জহির। সিদুরে মেঘ দেখে বোঝা যায়, কেমন বৃষ্টি হবে! ওই পাঁচ পয়সার লাভ তাকে হয়তো এখন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে ১০০ এর বেশি পরিবারের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তার মাধ্যমে করেছেন। ১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারী চুয়াডাঙ্গার হাসপাতাল রোডের পাশের মহল্লায় মধ্যবিত্ত মুন্সী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যবসায়ি বাবা লুতফর হক মুন্সী ও হামিদা বানুর তিন ছেলে চার মেয়ের মধ্যে মেজো ছেলে জহুরুল হক মুন্সী। ছোট বেলা থেকে নরম-শান্ত স্বভাবের। ছেলেটি তার বাবার পরিবহন ব্যবসা বা মুদি ব্যবসা দেখাশুনা করতো; সাথে চলতো পড়াশুনা। দামুরহুদা উপজেলার একটি প্রইমারি স্কুল এ ১৯৬৬ সালে হাতেখড়ি শুরু হয়। তারপর চুয়াডাঙ্গা ভি.জে. স্কুল হতে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজ হতে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তারপর বাবার উৎসাহে ১৯৮০-৮১ সালে ভর্তি হয় যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। আলী ইদ্রিস স্যার এর তত্ত্বাবধানে “শ্বাব্দিক সাহিত্য সংসদে” সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। কবিতার ভীতর ছিল তার আগাধ ভালবাসা। একদিন স্বরচিত “মুক্ত কবিতা পাঠের আসরে” স্থানীয় একজন কে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করতে না দেয়ার অপরাধে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, অবশ্য পরের দিন স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো; “এক হাতে রামদা অপর হাতে কবিতা” খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা, ঘটনাটা হয়তো আর কোথাও হয়নি যে, কবিতা পাঠ করতে না দেয়ায় ধারাল অস্ত্রর আক্রমণ। ছাত্র ইউনিয়ন এর এই কর্মী, যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পাস করার পর বাবার ব্যাবসায় সহযোগিতা করতে থাকে এরই মধ্যে ৮-ই অগাস্ট-১৯৮৭সালে ফিরোজা হক এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্যে ৮ই অক্টোবর-১৯৮৯সালে বিয়ের দুই বছরের মাথায় পৃথিবীর বুকে মেয়ে মনিরা জন্ম গ্রহণ করে। বাবার ব্যাবসায় মন্দাভাবের কারনে ব্যাবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন। একদিন বেকার জহির কে তার বাবা বলেন “মানুষ তো রিক্সা চালায়েও সংসার চালাচ্ছে তুই কিছু করতে পারিস না?” বাবারএই কথা মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে, চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় এসে ১৯৯০ সালে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ১২০০ টাকা বেতনে ওপেক্স গ্রুপ চাকরি শুরু করে। ওভার টাইম জব করে সব মিলিয়ে ১৮০০ টাকা বেতনেই ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। তিন বছর পর অত্তাধিক পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আবার শুরু হয় কর্ম জীবন। এইচ এম আলী আলতাফ এর আর্ক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এ জয়েন্ট করে। কঠোর পরিশ্রম, সততা, কাজের প্রতি ভালবাসা, একাগ্রতা ও কমিটমেন্ট তাকে আলী আলতাফ এর কাছে আরও বিশ্বস্ত করে তোলে। ২০০০ সালের দিকে আলতাফ পরলোক গমন করলে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আলী আলতাফ এর ভাই জনাব আলী আশরাফ কোম্পানিটি চালু করতে বিশ্বস্ত জহুরুল হক মুন্সী কে দায়িত্ত দেন। অনেক বিরুপ মন্তব্য সত্ত্বেও জনাব মুন্সী সততার আলোকে মাত্র তিন লাখ টাকায় ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে প্রথম বছরেই ৩৫ লাখ টাকা লাভ করেন। আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার মালিকাধিন প্রতিষ্ঠান ১.আরকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, ২. ক্লিন প্লানেট লিমিটেড, ৩. প্রাইম গ্যাস সার্ভিস,৪. কবির এন্টারপ্রাইজ, ৫. ইউ অ্যান্ড জে ট্রেড লিমিটেড। ১০০ জনের ও বেশী কর্ম কর্তা কাজ করে তার প্রতিষ্ঠানে ও মাস্টার রোলে শত শত কর্মী আছে। আরকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড তিতাস গ্যাস কোম্পানির নাম্বর ওয়ান কন্ট্রাকটর । ৩০০-৩৫০ টি ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান তার কোম্পানির সেবা গ্রহণ করছেন। এতো বিশাল ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠানের গ্যাস লাইন ইন্সটালেশন ও মেইনট্যান্স কাজ করছেন কারন হিসাবে তিনি তার ১.কমেটমেন্ট ও ২. সততা কেই মূল্যায়ন করেছেন। মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে বড় করেন কারন তার মাধ্যমে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করবে। নিসন্ধেহে ব্যাবসা কে আল্লাহ করেছেন বরকতময়। ১৫ই ডিসেম্বর-২০০০সালে জন্ম হয় ছেলে রুবায়তুল হক মুন্সীর। বর্তমানে মেয়ে ডাক্তার ও ছেলে একটি সমৃদ্ধ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। বড় ভাই কলেজের প্রিন্সিপল আর ছোট ভাই জহুরুল হক মুন্সীর প্রতিষ্ঠান এ কর্মরত আছে। দুইটা বোন টি.এন.টি. ও বি.আর.ডি.বি. কর্মরত আছে। তার প্রতিষ্ঠাপন করা “ইউ অ্যান্ড জে টেড লিমিটেড” এর চেয়ারম্যান হিসাবে তার জীবনসঙ্গিনী স্নাতক পাশ করা ফিরোজা হক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে মেয়ে ডাঃ মনিরা হক মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে রপ্তানি করা হচ্ছে। যা প্রান্তিক পর্যায়ে অনেকের কর্ম সংস্থান হচ্ছে। কর্মবীর এই মানুষটি মনে করেন, যেকোনো ব্যক্তি সফল হবে যদি সে, কাজকে ভালবাসতে পারে কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারে এবং সততার সাথে কাজ করে। ভাষা শেখার বাপারে ইংরাজী কে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলার পরিবর্তে ইংরাজী হলে অনেক মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠতো যা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে একটি বিপ্লব সাধিত হত বলে মনে করেন। দক্ষিন এশিয়ার ভিতরে ইন্ডিয়া সহ যারা যত দ্রত ইংরেজীকে বুকে লালন করেছে, তারা খুব দ্রুত অগ্রসর হয়েছে৷ অপরদিকে নানা প্রতিবন্ধকতায় আমরা পিছিয়ে পড়েছি; যার কারণে তথ্য প্রযুক্তির যুগে দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করতে ভাষা শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি রপ্ত করত সকল যশোর পলিটেকনিক এর সকল শিক্ষার্থীদের কে ইংরাজী ও প্রযুক্তির উপডব় জোড় দিতে উৎসাহিত করেছেন। প্রাণও হাসসৌজ্জল ও ধর্মভীরু মানুষটির সাথে কথা বলে বোঝা যায় কতটা সরলতা এবং কাজ প্রিয় মানুষ তিনি। সব কিছুতে মহান রাব্বুল আলামিন এর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও অপরিসীম ভালবাসা। ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক এই মানুষটির রয়েছে সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে; সবাই কে মানুষের কাতারে দেখতেই বেশি ভালবাসেন। তিনি ২০১৩ সালে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন , তাছাড়া ভারত ও নেপাল ভ্রমন করেছেন। শুরু করা কাজটাকে শেষ করা, হেরে যাবার ভয়তে কাজ বন্ধ না করে আরো উদ্দামে কাজ করে সফলতার মন্ত্র হিসাবে অভিপ্রায় করেছেন। জহুরুল হক মুন্সী একজন সমাজ সেবক ও দীন-দ্বরদী মানুষ। তিনি যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনীর জেনারেল সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৫. বিশিষ্ট কবি জনাব হাফিজুর রহমান:
আলোকিত মানুষ : তারার সন্ধানে সফলতার গল্প ০৫: মোঃ হাফিজুর রাহমান “ফুলে ফুলে ভরে দেব ভরের বাগান। তুমি দেখে নিও- দক্ষিণা বাতাস যদি ফিরে আসে আমি আসব।“ আথবা, “মানুষ হয়ে এসব স্বপ্ন এ জনমে মিটবে না তাই পর জনমে তুমি আমি পাখি হয়ে জন্ম নিব।“ এমন শত কবিতার ভীতর কবি তার শুপ্ত কবি প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি প্রকৃতি, দ্রোহ, প্রেমময় রোমান্টিক ও মুক্ত মনের কবি। মোঃ হাফিজুর রাহমান কবিতা অঙ্গনে “হাফিজ রাহমান” নামে পরিচিত । ১৯৫৯ সালের ২০ শে জানুয়ারী মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার ডুমুড়শিয়া গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষি পরিবারে সম্ভ্রান্ত মোল্লা বংশে তার জন্ম। বাবা সফিউদ্দিন মোল্লা ছিলেন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে ও কৃষি কাজ করতেন এবং মাতা আছিরন নেছা ছিলেন গৃহিণী। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে হাফিজ ছিল বড়। ১৯৬৭ সালে ডুমুড়শিয়া প্রাইমারি স্কুলে তার পড়াশুনার যাত্রা শুরু হয়, অতান্ত মেধাবী হাফিজ পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে। ১৯৭২ সালে ভর্তি হয় ডুমুড়শিয়া ডি.সি.উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাচা মৌলোভী জয়নাল আবেদিনের অনুপ্রেরণায় মাধ্যমিকে থাকতেই সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করতেন।ওই সময় অত্যান্ত মেধাবী হাফিজ ডুমুড়শিয়া ডি.সি. উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে মনোনীত হন। অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি লাভ করে ও এস.এস.সি তে ৬৬১ মার্ক লাভ করে। অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের পরামর্শে তিনি যশোর পলিটেকনিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। যশোর পলিটেকনিকে অধ্যায়ন কালে হাফিজ রাহমান নামে যশোরের দৈনিক রানার, স্ফুলিঙ্গ ও খুলনার প্রবাসী পত্রিকায় কবিতা লিখতেন। তার কবিতার ভীতর উল্লেখ যোগ্য ছিল- “ওগো মোর নির্দয়া পাষাণী প্রিয়া প্রতীক্ষার শেষ সীমা গেলো শেষ হয়ে, তবুও তোমার কোন স্নিগ্ধ ছায়া লাগিল না আমার এ তপ্ত হৃদয়ে। “ আবার কখনো বা হতাশ হয়ে, বিরক্ত হয়ে লিখেছেন, “চারিদিকের বড় দুঃসময় এখন পাশা পাশি বাস, তবু দুরুত্তের নদী বড় ব্যাপক।“ ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের সামনে উপস্থিত হয়ে লিখেছেন, “নির্জন বিকালের পড়ন্ত রোদে শহীদ মিনারের সামনে থমকে দাঁড়ালাম। অজস্র বুনো ফুল-রক্তাক্ত সবুজ ছেয়ে আছে সৌরভে শুধু।“ মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার ওপর ভিত্তি করে লিখেছেন, “প্রত্যহ স্বপনে দেখি- অসংখ্য লাশ, দগ্ধ, অর্ধ-দগ্ধ, বা গলিত পচা লাশের ওপর শুয়ে আছি।“ তিনি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু যশোর পলিটেকনিকে মাগুরার ছাত্র ছাত্রীদের জাসদ ছাত্রলীগের দাপট বেশী ছিল। জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীদের অনুরোধে তিনি ১১ জানুয়ারী ১৯৮০ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। সে সময় ছাত্রদের নির্বাচনে মাত্র দুই ভোটের বাবধানে জনাব ফারুকুজ্জামান কে পরাজিত করেন। তার কবিতার আদর্শ হিসাবে “আলী ইদ্রিস” কে গুরু হিসাবে মানেন। ১৯৮৪ সালে তিতাস গ্যাসে কর্মজীবন শুরুর পর আর সাহিত্য চর্চার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আশির দশকে লেখা সেই সব কবিতা নিয়ে তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “ফিরে আসি প্রতিদিন” প্রকাশিত হয়েছে। মূলত আশির দশকের দ্রোহ ও প্রেমের কবিতা নিয়েই এই কাব্য গ্রন্থ। তিনি ২৭শে নভেম্বর ১৯৮৭ সালে রাজিয়া সুলতানাকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহণ করেন। ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ সালে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখেন রেজায়ানুল হাফিজ (চন্দন)। বর্তমানে চন্দন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত আছে। ১২ জানুয়ারী ১৯৯৬ সালে ছোট ছেলে রায়হানুল হাফিজ (সৌরভ) জন্ম গ্রহণ করে। বর্তমানে এমআইএসটি তে কম্পিউটার বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করছে। ২০১৪ সালে ব্রেন ষ্টক করেন তারপর আবার পুর্নৌদ্দামে আবার কবিতা চর্চা শুরু করেছেন। অতান্ত সুখী পরিবারে এক ধরনের সাহিত্য পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে; ফলে তিনি আবার সাহিত্য অঙ্গনে ফিরে এসেছেন এবং এখন বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাই তার কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে। কবি হাফিজ রাহমান বাংলাদেশের অনেক গুনি কবিদের সান্নিধ্য অর্জনে সক্ষম। নিয়মিত সাহিত্যর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন। তাই “এবং মানুষ” নামে একটা কবিতার পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন। তাছাড়া তিনি অনলাইন ও ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে যেমন, “শাব্দিক”, “এবং মানুষ” এ নিয়মিত লিখছেন। তিনি মনে করেন যে মানুষের ভিতরে সাহিত্য বা কবিতা কে পোষণ করতে পারবে সে একজন সত্যিকারের নাগরিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।২০১৫ সালে সস্ত্রীক হজ পালনের উদ্দেশে সৌদিআরব যান। তাছাড়া তিনি থাইল্যান্ড ও ভ্রমন করেছেন। নতুনদের কে তিনি ১. বানান সচেতন, ২. চিত্রকল্প ও ৩. ভাবার্থ নিয়ে চর্চা করার মাধ্যমে কবিতা বা সাহিত্য অবদানের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি রাজিয়া-হাফিজ ফাউন্ডেশন নামে একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান করার মহতি উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যখন তার কর্ম জীবন শেষের দিকে, তখন তিনি যে উদ্যমে আবার সাহিত্য চর্চা শুরু করেছেন এটা যে কত বড় পেরনা হবে নতুন দের জন্য তা অকপটে স্বীকার করতে কোনো দিধা নেই। অনেক তা শেষ বিকালের সূর্যের কিরণের ভালবাসা মাখা সোনালী হাসি। তার কবি প্রতিভা বাংলার সাহিত্য কে আরো সমৃদ্ধ করবে, এটা নিষন্ধে বলা যাই। সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে যশোর পলিটেকনিক প্রাক্তনিতে দায়িত্ব পালন করছেন। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত "হেমন্তে" কবিতার সুর ধরে আমরা আবৃতি করে বলতে পারি ....... "হেমন্তে হাঁটিনা আমি বহুকাল এই মেঠোপথে, ভোরের মিঠে রোদে ঘুমঘুম চোখে সেই কবে হেঁটেছিলাম!"





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন